আমার পুত্রবধূ মিন্নিই রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা

ঢাকা : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) রাত ৮টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। সংবাদ সম্মেলনে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান শ্বশুর আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ।

তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এদিকে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়েছিলেন নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। মিন্নি যে নয়নের বাসায় গিয়েছিল তা প্রতিবেশীরাও দেখেছে। আলোচিত এ ঘটনার ১৮ দিনের মাথায় এমন বিস্ফোরক তথ্য দিলো নয়ন বন্ডের মা।

তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২৬ জুন বুধবার। এর আগের দিন মঙ্গলবারও মিন্নি আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করে। আমার ছেলে তো মারাই গেছে। আমার তো আর মিথ্যে বলার কিছু নেই। মিন্নি যে মঙ্গলবারও আমাদের বাসায় গিয়েছিল তা আমার প্রতিবেশীরাও দেখেছে।

নয়ন বন্ডের মা বলেন, শুধু হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবারই নয়; রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করত। মোটরসাইকেলে মিন্নিকে রিফাত শরীফ কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত। এরপর মিন্নি আমাদের বাসায় চলে আসত। আবার কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মিন্নি আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত।

শাহিদা বেগম বলেন, রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের খবর পাওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি, যোগাযোগ না রাখতে। কিন্তু আমার ছেলে নয়ন কখনও আমার কথা শুনত না। ওর মনে যা চাইতো ও তা-ই করত। নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না।

রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নিয়মিত নয়ন বন্ডের বাসায় আসা-যাওয়া এবং হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে শনিবার সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের ফোনে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, মিন্নি অসুস্থ। গতকাল তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। মিন্নি এখন ঘুমাচ্ছে। তাই মিন্নি কথা বলতে পারবে না।

এছাড়া মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে হলে বরগুনা জেলা পুলিশের অনুমতি লাগবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমি তাদের বিচার চাই।

গত শুক্রবার থেকে রিফাত ও মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। তার নিরাপত্তার জন্য তার বাড়ির বাইরে পুলিশ রাখা হয়েছে।

দেশব্যাপী আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ওইদির ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।

বরগুনায় মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বোরবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বরগুনার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। একই দাবিতে শনিবার রাতে বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাতের বাবা ও মিন্নির শ্বশুর দুলাল শরীফ।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ, চাচা আবদুল আজীজ শরীফ, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাভোকেট সুনাম দেবনাথ, সদর উপজেল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মারুফ মৃধা প্রমুখ। এতে নিহত রিফাতের বন্ধুরাও উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তারা মিন্নিকে রিফাত হত্যার ‘নেপথ্যের নায়িকা’ উল্লেখ করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

রিফাত হত্যার আগের দিন নয়নের বাসায় যায় মিন্নি : রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়েছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়নের মা শাহিদা বেগম এ কথা জানান।

তিনি বলেন, রিফাতকে হত্যা করা হয় ২৬ জুন (বুধবার)। এর আগের দিন ২৫ জুন (মঙ্গলবার)ও মিন্নি আমাদের বাসায় আসে। আমার ছেলে তো মারাই গেছে। এখন আমার আর মিথ্যা বলার কিছু নেই। মিন্নি যে মঙ্গলবারও আমাদের বাসায় এসেছিল তা প্রতিবেশীরাও দেখেছেন। শুধু হত্যার আগের দিনই নয়; রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাসায় আসত।

রিফাত মোটরসাইকেলে মিন্নিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত। এরপর মিন্নি আমাদের বাসায় চলে আসত। আবার কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে সে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত। রিফাত হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। বলেন মিন্নির বিয়ের খবর পাওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি, যোগাযোগ না রাখতে। কিন্তু আমার ছেলে কথা শুনত না। ওর মনে যা চাইত ও তা-ই করত। নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না।

বিয়ের পরও নিয়মিত নয়ন বন্ডের বাসায় আসা-যাওয়া এবং হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও সেখানে যাওয়ার বিষয়ে গতকাল শনিবার সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের ফোনে কল দিলে তিনি জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ। সে এখন ঘুমাচ্ছে। তাই বলতে পারবে না। শুক্রবার তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে হলে বরগুনা জেলা পুলিশের অনুমতি লাগবে বলেও জানান তিনি। এদিকে গত শুক্রবার থেকে রিফাত ও মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। তার নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয় নিহত রিফাতের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো রামদা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে ও পরে মিন্নির আচরণে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। রিফাত হত্যার পরদিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি। আমি তাদের বিচার চাই।

ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ভিডিওটি ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডের। ফুটেজটির ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১০-১২ জন রিফাতকে মারতে মারতে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বের হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে রিফাতকে ধরে রেখেছে। বাকি দুজন দুই হাত ধরেছে। ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ফুটেজে মিন্নিকে দেখা যায়, তার বাম হাতে একটি পার্স ছিল। সে পার্স হাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। একবার ডানেও তাকিয়েছেন কলেজের দিকে।

৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে যখন নয়নের সঙ্গীরা রিফাতের মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করেন তখনো স্বাভাবিক ছিল মিন্নি। ৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে যখন সব বন্ধুরা একসঙ্গে রিফাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তখন প্রথমবারের মতো দৌড়ে যান মিন্নি। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তখন দা বের করে কোপানো শুরু হয়। পেছন থেকে মিন্নিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। ওই ঘটনার পর নয়নরা যখন ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায় তখন একজন মিন্নিকে তার পার্সটি মাটি থেকে তুলে দেন। নয়নদের চলে যাওয়া দেখেন মিন্নি। এরপর স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি।

ওই ঘটনার ৮ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। এ ভিডিওর কারণে নতুন করে উঠে আসে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন তখন বলেন, তদন্ত স্বচ্ছ ও সাবলীল করতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। সে এ মামলার একজন সাক্ষী, তদন্তের স্বার্থে দরকার হলে একাধিকবার তার সঙ্গে কথা বলব।

মিন্নি সর্ম্পকে যা বললেন নয়নের মা : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়েছিলেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এ কথা জানিয়েছেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম।

তিনি বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২৬ জুন, বুধবার। এর আগের দিন মঙ্গলবারও মিন্নি আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করে।’ ‘আমার ছেলে তো মারাই গেছে। আমার তো আর মিথ্যে বলার কিছু নেই। মিন্নি যে মঙ্গলবারও আমাদের বাসায় গিয়েছিল তা আমার প্রতিবেশীরাও দেখেছে।’

নয়ন বন্ডের মা আরও বলেন, ‘শুধু হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবারই নয়; রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরও মিন্নি নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে নয়নের সঙ্গে দেখা করত। মোটরসাইকেলে মিন্নিকে রিফাত শরীফ কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যেত। এরপর মিন্নি আমাদের বাসায় চলে আসত। আবার কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে মিন্নি আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত।’

রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি জড়িত দাবি করে নয়নের মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের খবর পাওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি, যোগাযোগ না রাখতে। কিন্তু আমার ছেলে নয়ন কখনও আমার কথা শুনত না। ওর মনে যা চাইতো ও তা-ই করত। নয়ন যদি আমার কথা শুনত তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটত না।’

রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নিয়মিত নয়ন বন্ডের বাসায় আসা-যাওয়া এবং হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও নয়ন বন্ডের বাসায় যাওয়ার বিষয়ে শনিবার সকালে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের ফোনে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিন্নি অসুস্থ। গতকাল তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। মিন্নি এখন ঘুমাচ্ছে। তাই মিন্নি কথা বলতে পারবে না।’

এছাড়া মিন্নির সঙ্গে কথা বলতে হলে বরগুনা জেলা পুলিশের অনুমতি লাগবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো রামদা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

গত শনিবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে ও পরে মিন্নির আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমি তাদের বিচার চাই।

ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ভিডিওটি ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডের। ভিডিও ফুটেজটির ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১০-১২ জন রিফাতকে মারধর করতে করতে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে বের হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে রিফাতকে ধরে রেখেছে। বাকি দুজন দুই হাত ধরেছে। ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ফুটেজে মিন্নিকে দেখা যায়, তার বাম হাতে একটি পার্স ছিল। সে পার্স হাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। একবার ডানেও তাকিয়েছেন কলেজের দিকে।

৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে যখন নয়নের সঙ্গীরা রিফাতের মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করেন তখনও স্বাভাবিক ছিলেন মিন্নি। ৫ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে যখন সব বন্ধুরা একসঙ্গে রিফাতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তখন প্রথমবারের মতো দৌড়ে যান মিন্নি। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তখন দা বের করে কোপানো শুরু হয়। পেছন থেকে মিন্নিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়।

ওই ঘটনার পর নয়নরা যখন ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায় তখন একজন মিন্নিকে তার পার্সটি মাটি থেকে তুলে দেন। নয়নদের চলে যাওয়া দেখেন মিন্নি। এরপর স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি। ওই ঘটনার ৮ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।

নতুন এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে আসে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন ওই সময় বলেন, তদন্ত স্বচ্ছ ও সাবলীল করতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। সে এ মামলার একজন সাক্ষী, তদন্তের স্বার্থে একবার নয় প্রয়োজনে ১০ বার তার সঙ্গে কথা বলা হবে।

গত শুক্রবার থেকে রিফাত ও মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। তার নিরাপত্তার জন্য তার বাড়ির বাইরে পুলিশ রাখা হয়েছে।

গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন ভিডিও ফুটেজটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই মিন্নিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তোলেন।

শম্পা আক্তার নামে ঢাবির এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘মিন্নি জড়িত বোঝা যায়, তার কোন ভূমিকাই নাই যখন ধরে নিয়ে যায়। দেশবাসীর চাওয়া ওকে শাস্তি দেওয়া যেন হয়। এমন নোংরা মেয়ের জন্য সব ভালো মেয়েরও বদনাম হয়।’

ইতি আক্তার নামে একজন বিবিএ’র শিক্ষার্থী লেখেন, ‘রিফাতের স্ত্রী অবশ্যই জড়িত। এই ভিডিও দেখার পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করছে না কেন?’ জেসমিন জাহান নামে আরেক শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ‘মিন্নির হাঁটার গতি স্লো মোশনে রিপ্লে দেখানোর মতো।’

মুন্না নামের আরেকজন লেখেন, প্রথমে মিন্নির সামনে থেকে যখন দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করছিল তখন মিন্নির ‘স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া’ দেখে আমি বিস্মিত।

দেশব্যাপী আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ওইদির ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।

সোনালীনিউজ/